বাংলা দ্বিতীয় পত্র ব্যাকরণ: নিয়ম, উদাহরণ ও MCQ প্রশ্নোত্তর
বাংলা দ্বিতীয় পত্র বা ব্যাকরণ শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভালোভাবে ব্যাকরণ আয়ত্ত করতে পারলে শুধু পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া যায় না, বরং লেখালেখি ও দৈনন্দিন ভাষা ব্যবহারে শুদ্ধতা আসে। তাই আজ আমরা ধাপে ধাপে বাংলা ব্যাকরণের প্রধান অংশ, নিয়ম, উদাহরণ এবং গুরুত্বপূর্ণ MCQ প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করব।
১. শব্দতত্ত্ব
সংজ্ঞা: শব্দ হলো ধ্বনির সমষ্টি যা নির্দিষ্ট অর্থ প্রকাশ করে।
প্রকারভেদ:
- সরল শব্দ: পানি, আলো, ছেলে।
- যৌগিক শব্দ: রাজপথ, জলধারা।
- ব্যুৎপন্ন শব্দ: শিক্ষার্থী (শিক্ষা + আর্থি)।
👉 MCQ প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১: “শিক্ষার্থী” শব্দটি কোন ধরনের?
ক. সরল শব্দ
খ. যৌগিক শব্দ
গ. ব্যুৎপন্ন শব্দ
ঘ. বিদেশি শব্দ
✅ উত্তর: গ. ব্যুৎপন্ন শব্দ
প্রশ্ন ২: “রাজপথ” কোন ধরনের শব্দ?
ক. যৌগিক
খ. ব্যুৎপন্ন
গ. সরল
ঘ. মিশ্র
✅ উত্তর: ক. যৌগিক
২. বাক্যতত্ত্ব
সংজ্ঞা: বাক্য হলো এক বা একাধিক শব্দের সুশৃঙ্খল সমষ্টি, যা সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে।
বাক্যের অংশ: কর্তা, ক্রিয়া, কর্ম, বিশেষণ/অব্যয়।
উদাহরণ: “রাহিম বই পড়ে।” (কর্তা=রাহিম, কর্ম=বই, ক্রিয়া=পড়ে)
👉 MCQ প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ৩: “রাহিম খেলায় যোগ দিল” বাক্যে ‘খেলায়’ কোন কারক?
ক. কর্তা
খ. কর্ম
গ. অধিকরণ
ঘ. সম্প্রদান
✅ উত্তর: গ. অধিকরণ
প্রশ্ন ৪: “রাহিম বই পড়ে।” এখানে কর্তা কোনটি?
ক. পড়ে
খ. বই
গ. রাহিম
ঘ. ক্রিয়া
✅ উত্তর: গ. রাহিম
৩. সমাস
সংজ্ঞা: দুই বা ততোধিক শব্দকে একত্রে মিলিয়ে নতুন শব্দ গঠন করলে তাকে সমাস বলে।
প্রকারভেদ:
- দ্বন্দ্ব সমাস – মা-বাবা
- তৎপুরুষ সমাস – রাজপুত্র
- কর্মধারয় সমাস – নীলপদ্ম
- বহুব্রীহি সমাস – চতুরঙ্গ
- অব্যয়ভাব সমাস – একে একে
👉 MCQ প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ৫: “রাজপুত্র” কোন সমাস?
ক. বহুব্রীহি
খ. তৎপুরুষ
গ. দ্বন্দ্ব
ঘ. কর্মধারয়
✅ উত্তর: খ. তৎপুরুষ
প্রশ্ন ৬: “মা-বাবা” কোন সমাস?
ক. দ্বন্দ্ব
খ. বহুব্রীহি
গ. তৎপুরুষ
ঘ. অব্যয়ভাব
✅ উত্তর: ক. দ্বন্দ্ব
৪. অলঙ্কার
অলঙ্কার দুই ভাগ:
- শব্দ অলঙ্কার – অনুপ্রাস, যমক, পুনরুক্তি।
- অর্থ অলঙ্কার – উপমা, রূপক, অতিশয়োক্তি।
উদাহরণ:
- অনুপ্রাস: “চঞ্চল চপল চাঁদ।”
- উপমা: “তুমি ফুলের মতো সুন্দর।”
👉 MCQ প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ৭: “তুমি ফুলের মতো সুন্দর” এখানে কোন অলঙ্কার ব্যবহৃত হয়েছে?
ক. রূপক
খ. উপমা
গ. যমক
ঘ. অনুপ্রাস
✅ উত্তর: খ. উপমা
প্রশ্ন ৮: “চঞ্চল চপল চাঁদ” কোন অলঙ্কার?
ক. অনুপ্রাস
খ. রূপক
গ. যমক
ঘ. শ্লেষ
✅ উত্তর: ক. অনুপ্রাস
৫. ছন্দ
সংজ্ঞা: ছন্দ হলো কবিতার তাল, লয় ও মাত্রার বিন্যাস।
প্রধান প্রকার:
- অক্ষরবৃত্ত ছন্দ
- মাত্রাবৃত্ত ছন্দ
- স্বরবৃত্ত ছন্দ
উদাহরণ:
- অক্ষরবৃত্ত: “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি”
- মাত্রাবৃত্ত: “চরণে চরণে গাঁথা”
👉 MCQ প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ৯: “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি” কোন ছন্দে লেখা?
ক. মাত্রাবৃত্ত
খ. স্বরবৃত্ত
গ. অক্ষরবৃত্ত
ঘ. মুক্তছন্দ
✅ উত্তর: গ. অক্ষরবৃত্ত
প্রশ্ন ১০: “চরণে চরণে গাঁথা” কোন ছন্দ?
ক. মাত্রাবৃত্ত
খ. অক্ষরবৃত্ত
গ. স্বরবৃত্ত
ঘ. যতি
✅ উত্তর: ক. মাত্রাবৃত্ত
৬. রচনা, চিঠি ও অনুচ্ছেদ
গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ টপিক:
- পরিবেশ দূষণ
- তথ্যপ্রযুক্তি
- গ্রন্থাগারের গুরুত্ব
চিঠি:
- বন্ধুকে জন্মদিনে নিমন্ত্রণ
- বিদ্যালয়ে গ্রন্থাগার স্থাপনের আবেদন
👉 MCQ প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১১: বাংলা দ্বিতীয় পত্রে রচনার মান নির্ধারণের প্রধান উপাদান কোনটি?
ক. সুন্দর হাতের লেখা
খ. শুদ্ধ ভাষা
গ. ব্যাকরণগত নিয়ম
ঘ. সবগুলোই
✅ উত্তর: ঘ. সবগুলোই
৭. পরীক্ষাভিত্তিক টিপস
- SSC তে বেশি আসে: সমাস, কারক বিভক্তি, অলঙ্কার।
- HSC তে: ছন্দ, রচনা, জটিল ব্যাকরণ প্রশ্ন।
- ভর্তি ও BCS: MCQ আকারে সমাস, অলঙ্কার, সমার্থক-বিপরীতার্থক।
৮. বাগধারা
সংজ্ঞা: কোনো বিশেষ অর্থ বোঝাতে প্রচলিত রূপক বা অলঙ্কৃত শব্দগুচ্ছকে বাগধারা বলে।
উদাহরণ:
- অঙ্গার জ্বালা → দুঃখ কষ্ট
- হাত কাটা → ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া
- মুখ কালো → অপমানিত হওয়া
👉 MCQ প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১২: “মুখ কালো” বাগধারার অর্থ কী?
ক. রাগ হওয়া
খ. দুঃখ পাওয়া
গ. অপমানিত হওয়া
ঘ. মৃত্যু
✅ উত্তর: গ. অপমানিত হওয়া
৯. সন্ধি বিচ্ছেদ
সংজ্ঞা: দুটি ধ্বনি বা শব্দের মিলনে নতুন রূপ তৈরি হলে তাকে সন্ধি বলে, আর ভেঙে মূল রূপে ফিরিয়ে নেওয়াকে সন্ধি বিচ্ছেদ বলে।
প্রকারভেদ:
- স্বর সন্ধি – যেমন: গৃহ + অন্তর → গৃহান্তর
- ব্যঞ্জন সন্ধি – যেমন: তৎ + করণ → তৎকরণ
- বিসর্গ সন্ধি – যেমন: দিগ্ + অন্ত → দিগন্ত
👉 MCQ প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১৩: “দিগন্ত” শব্দের সন্ধি বিচ্ছেদ কী?
ক. দিগ্ + অন্ত
খ. দিক + অন্ত
গ. দিগ্ + অন্তর
ঘ. দিগন্তর
✅ উত্তর: ক. দিগ্ + অন্ত
১০. বানান (শুদ্ধ ও অশুদ্ধ)
বাংলা ব্যাকরণে শুদ্ধ বানান একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অশুদ্ধ বানান প্রায়শই পরীক্ষায় সংশোধন করতে হয়।
উদাহরণ:
- অশুদ্ধ: শ্বশুরবাড়ী → শুদ্ধ: শ্বশুরবাড়ি
- অশুদ্ধ: মর্যাদা → শুদ্ধ: মর্যাদা (দুই বানানেই চল, তবে ‘মর্যাদা’ বেশি শুদ্ধ)।
- অশুদ্ধ: শ্রদ্ধাঞ্জলি → শুদ্ধ: শ্রদ্ধাঞ্জলি
👉 MCQ প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১৪: নিচের কোন বানানটি শুদ্ধ?
ক. শ্রদ্ধান্জলি
খ. শ্রদ্ধাঞ্জলি
গ. শ্রাদ্ধাঞ্জলি
ঘ. শ্রাদ্ধান্জলি
✅ উত্তর: খ. শ্রদ্ধাঞ্জলি
১১. সমার্থক ও বিপরীতার্থক শব্দ
সমার্থক শব্দ: যেসব শব্দের অর্থ কাছাকাছি একই – যেমন, সূর্য = আদিত্য, দিনেশ।
বিপরীতার্থক শব্দ: বিপরীত অর্থ প্রকাশ করে – যেমন, আলো ↔ অন্ধকার।
👉 MCQ প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১৫: “অন্ধকার” এর সমার্থক শব্দ কোনটি?
ক. অজ্ঞান
খ. তিমির
গ. আলোক
ঘ. অমানুষ
✅ উত্তর: খ. তিমির
প্রশ্ন ১৬: “বিজয়” এর বিপরীতার্থক শব্দ কী?
ক. বিজাতীয়
খ. পরাজয়
গ. উন্নতি
ঘ. পতন
✅ উত্তর: খ. পরাজয়
১২. লিঙ্গ পরিবর্তন
বাংলা ভাষায় চার ধরনের লিঙ্গ রয়েছে: পুংলিঙ্গ, স্ত্রীলিঙ্গ, ক্লীবলিঙ্গ ও সাধারণলিঙ্গ।
উদাহরণ:
- পুংলিঙ্গ: রাজা → স্ত্রীলিঙ্গ: রানি
- পুংলিঙ্গ: ছেলে → স্ত্রীলিঙ্গ: মেয়ে
- পুংলিঙ্গ: ভৃত্য → স্ত্রীলিঙ্গ: ভৃত্যা
👉 MCQ প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১৭: “রাজা” এর স্ত্রীলিঙ্গ কী?
ক. রাজবধূ
খ. রানি
গ. রাজকন্যা
ঘ. রাজবালা
✅ উত্তর: খ. রানি
১৩. ভাষারীতি
বাংলা ভাষার প্রধান দুটি রীতি আছে:
- সাধু রীতি – যেমন: “আমি বিদ্যালয়ে গমন করিব।”
- চলিত রীতি – যেমন: “আমি স্কুলে যাব।”
👉 MCQ প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১৮: “আমি স্কুলে যাচ্ছি” কোন ভাষারীতি?
ক. সাধু
খ. চলিত
গ. মিশ্র
ঘ. প্রাচীন
✅ উত্তর: খ. চলিত
১৪. বাক্য সংকোচন
সংজ্ঞা: একটি বড় বাক্যকে ছোট করে একই অর্থ বজায় রেখে লেখা হলে তাকে বাক্য সংকোচন বলে।
উদাহরণ:
- মূল: যে ছেলে পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে সে পুরস্কার পেয়েছে।
- সংকোচন: পরীক্ষায় প্রথম হওয়া ছেলে পুরস্কার পেয়েছে।
👉 MCQ প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১৯: “যে ছাত্র নিয়মিত পড়াশোনা করে সে সফল হয়।” বাক্যটি সংকোচন করলে হবে—
ক. নিয়মিত পড়াশোনা করা ছাত্র সফল হয়
খ. ছাত্র পড়াশোনা করে সফল হয়
গ. যে ছাত্র সফল হয় সে পড়াশোনা করে
ঘ. নিয়মিত ছাত্র সফল হয়
✅ উত্তর: ক. নিয়মিত পড়াশোনা করা ছাত্র সফল হয়
১৫. যথার্থ অনুবাদ
সংজ্ঞা: ইংরেজি বা অন্য ভাষার বাক্যকে বাংলায় শুদ্ধ অর্থসহ রূপান্তর করাকে যথার্থ অনুবাদ বলে।
উদাহরণ:
- English: Time and tide wait for none.
- যথার্থ অনুবাদ: সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না।
👉 MCQ প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ২০: “Health is wealth” এর যথার্থ অনুবাদ কোনটি?
ক. স্বাস্থ্যই সম্পদ
খ. স্বাস্থ্য টাকা আনে
গ. স্বাস্থ্যবান ধনী হয়
ঘ. সুস্থ মানুষ ধনী হয়
✅ উত্তর: ক. স্বাস্থ্যই সম্পদ
উপসংহার
বাংলা দ্বিতীয় পত্র বা ব্যাকরণকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। এতে রয়েছে—শব্দতত্ত্ব থেকে শুরু করে সমাস, অলঙ্কার, ছন্দ, বাগধারা, সন্ধি বিচ্ছেদ, বানান, সমার্থক-বিপরীতার্থক, লিঙ্গ পরিবর্তন, ভাষারীতি, বাক্য সংকোচন এবং যথার্থ অনুবাদ।
প্রতিটি টপিক বুঝে উদাহরণসহ অনুশীলন করলে শুধু পরীক্ষায় নয়, বাস্তব জীবনের লেখালেখি ও কথাবার্তাতেও ভাষা হবে শুদ্ধ ও সুন্দর।
এখানে থেমে থাকলে চলবে না আরো পড়তে হবে-
বাংলা ব্যাকরণ MCQ প্রশ্ন-উত্তর ২০২৫ | চাকরি পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ৫০টি MCQ
